Bangla24x7 Desk : ডায়মন্ড হারবার রবীন্দ্র ভবনে ৭ টি বিধানসভার বিধায়ক , পুরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলর , পঞ্চায়েতের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্ব সহ পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ডায়মন্ড হারবারে প্রশাসনিক বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একাধিক ইস্যুতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
১) শুভেন্দু অধিকারী মানসিক ভারসাম্যহীন :
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। শুভেন্দু অধিকারী দুপুরে যা বলেন রাতে ভুলে যান আবার সকালে যা বলেন বিকালে ভুলে যান। কিভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেগম অথবা তাঁকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু অধিকারী – এই প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি স্ক্রিনশট প্রমাণ হিসেবে দেখিয়ে দেন অভিষেক। পাশাপাশি নিজের তিন বছরের পুত্রকে নিয়ে টানাটানি করা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন অভিষেক। তিনি জানান , ‘প্রথমে স্ত্রী , তারপর শ্যালিকা এখন পুত্রকে নিয়ে টানাটানি করতে ছাড়ছে না।’ তিনি আরোও জানান , ‘বিনয় মিশ্রের সাথে বলা কথার ভয়েস টেস্টিং আদালতে প্রমাণ হোক। অন্যায় করলে ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করবো। বিজেপির সাথে লড়াই আমার চলবে’।
২) বিরবাহা হাঁসদাকে কটাক্ষ :
এদিনের প্রশাসনিক বৈঠক শেষে বীরবাহা হাঁসদা ও দেবনাথ হাঁসদাকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণের বিষয় প্রধানমন্ত্রী , স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার চ্যালেঞ্জ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান , ‘অখিল গিরির মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে ক্ষমা চেয়েছেন , তাহলে আদিবাসী জনজাতির মানুষকে অপমান করলে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি ক্ষমা চাইতে পারবেন ?’
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মুর উদ্দেশ্যে অখিল গিরির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার মাঝেই তৃণমূলের তরফে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে শুভেন্দু অধিকারীকে বীরবাহা হাঁসদাদের কটাক্ষ করে বলতে শোনা যায় , “এই যেগুলা বসে আছে সেগুলো শিশু। এই দেবনাথ হাঁসদা, বীরবাহা এরা সব শিশু। আমার জুতোর নীচে থাকে।”
৩) পঞ্চায়েত নির্বাচন ও নতুন তৃণমূল :
এদিন আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন ও নতুন তৃণমূল নিয়ে মুখ খোলেন অভিষেক। নতুন তৃণমূল অর্থাৎ যে পাঁচ মাস আগে দলে এসেছে তার মত অনুযায়ী চলবে তৃণমূল , এমনটা নয়। মানুষ যেরকম ভাবে চাইবে সেই রকম ভাবেই কাজকর্ম করবে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন স্বচ্ছ , শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন হবে বলেই জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এমনই নির্দেশ রয়েছে প্রশাসনের কাছে। পাশাপাশি তিনি জানান , পঞ্চায়েতের প্রার্থী নির্বাচনের বিষয় স্বচ্ছতা , কর্মদক্ষতা ও সেবাপরায়ন মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিকেই বেছে নেবে দল।
৪) রাজ্যপাল প্রসঙ্গে অভিষেক :
সাম্প্রতিক সময় বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যপালের পদক্ষেপ নিয়ে অভিষেক জানান , ”রাজ্যপাল কারোর কথায় চলতে বাধ্য নন , তিনি নিজের সময় অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন। এই প্রসঙ্গে পরোক্ষে বিজেপির বিভিন্ন পদক্ষেপ এর বিষয়ে খোঁচা দেন অভিষেক। তিনি জানান , ”বিজেপি গত তিন বছরে রাজভবনকে নিজেদের অতিরিক্ত দলীয় কার্যালয় হিসেবে ভেবে নিয়েছিল।”
৫) নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও দিলীপ ঘোষ প্রসঙ্গে :
এদিন অভিষেক বলেন , ” বিজেপি সারা দেশের প্রায় ৫০০০ নেতাকে নিরাপত্তা দেয়। এক বছরে এক কোটি টাকা করে খরচা হলে পাঁচ বছরে ৫০০০ কোটি টাকা খরচ। এই টাকা সাধারণ মানুষের টাকা এই টাকা আমজনতার টাকা।”
এর পাশাপাশি অভিষেক আরোও জানান , ”অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামে দলিল পাওয়া গেলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যদি গ্রেফতার হন , তাহলে প্রসন্ন রায়ের বাড়িতে দিলীপ ঘোষের নামে দলিল পাওয়া গেলে দিলীপ ঘোষ কেন হবেন না” – প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। এর পাশাপাশি ডিসেম্বরে তৃণমূল সরকারের পতনের বিষয়ে ডিসেম্বরে বিজেপির ত্রিশটা বিধায়ক থাকবে না বলে কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৬) GET Well Soon প্রসঙ্গে অভিষেক :
শুভেন্দু অধিকারীর মানসিক সুস্থতা কামনা করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল যুব কংগ্রেস কর্মীদের ফুল দেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন শুভেন্দু। গণতন্ত্র ইস্যুতে সরব হওয়া শুভেন্দু অধিকারী কে এই ব্যাপারে কটাক্ষ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের সংসদীয় এলাকার মানুষের সুবিধা অসুবিধা সরাসরি ফোন করে যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছিলেন সাংসদ অভিষেক। প্রায় চার লক্ষ্যের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার থেকে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ এতে সামিল হয়েছেন বলেই জানান তিনি।
ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কিত বিষয় আলোচনা , প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রকল্প ও একাধিক বিষয় নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেই জানা গেছে। আগামী দিনে প্রত্যেক ১ মাস অথবা ২ মাস অন্তর এমন রিভিউ মিটিং করা হবে বলে জানিয়েছেন অভিষেক। এদিন বৈঠক শেষে আগামী রিভিউ মিটিং এর দিন হিসাবে ১৫ ই ডিসেম্বর স্থির করেন তিনি। জল প্রকল্প ইস্যু, আমতলায় হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার সেন্টার সহ বাস টার্মিনাস এবং বজবজের বাওয়ালি ব্রিজ ও ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান অভিষেক।