Bangla24x7 Desk : নয়ডার আকাশ ফুটো করা টুইন টাওয়ারের আয়ু আর মাত্র কয়েক মিনিট। রবিবার দুপুর গড়ালেই মৃত্যুক্ষণ! ধ্বংসকাজে সময় লাগেবে ৯ সেকেন্ড। ইতিমধ্যে তার জন্য ৩৭০০ কেজি বিস্ফোরক রাখা হয়েছে যমজ অট্টালিকায়। তারপরের কাজ শুধু একটি বোতামে চাপ দেওয়া। ৪০ তলা টুইন টাওয়ার ভাঙার কাজে যাতে কোনও বিপদ না হয় তার জন্য একাধিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। তারপরেও এলাকাবাসীর মন থেকে আশঙ্কা কাটছে না। তাদের বাড়ি সুরক্ষিত থাকবে তো ? অত বড় দু’টি টাওয়ার ভাঙায় এলাকার কতখানি ক্ষতি হতে পারে ?

বিস্ফোরকের ব্যবহারে টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফলে প্রচুর ধুলো তৈরি হবে। এবং তা বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্য, ভূ-গর্ভস্থ নির্মাণ ভাঙলে এতখানি দূষণের আশঙ্কা ছিল না, মাটির উপরেই ধ্বংসকাজে যতখানি হবে। সেই দূষণকে কীভাবে সামাল দেয় প্রশাসন, সেটাই এখন দেখার। ঠিক দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঘটনো হবে বিস্ফোরণ। ধ্বংসকাজের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জলের ধারার মতো মাটিতে মিশে যাবে টুইন টাওয়ার। এর ফলে বাতাসে ধুলো ছড়ালেও তা একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই থাকবে। ৯ সেকেন্ডের বিস্ফোরণ হলেও ধুলো থিতিয়ে যেতে সময় লাগবে ১২ সেকেন্ড।

অ্যাপেক্স এবং সিয়ান নামে পরিচিত নয়ডার সেক্টর ৯৩এ-তে অবস্থিত এই জোড়া ভবনদুটির একটির উচ্চতা ১০৩ মিটার, অন্যটি প্রায় ৯৭ মিটার। ২০০৪ সালে প্রথম ‘সুপারটেক এমেরাল্ড কোর্ট হাউজিং সোসাইটি’ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। নয়ডা কর্তৃপক্ষ এর জন্য ৪৮,২৬৩ বর্গ মিটার পরিমাপের জমি বরাদ্দ করেছিল। ২০০৫-এ নয়ডা কর্তৃপক্ষ ১৪টি ১০ তলা বাড়ির পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিল। ওই বছরই শুরু হয়েছিল এই ১৪টি টাওয়ার নির্মাণের কাজ ।

২০০৬ সালের জুনে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ মোট এলাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৪,৮১৯.৫১ বর্গ মিটার করা হয়। নিয়ম অনুসারে, ২০০৬ সালের পর নতুন বরাদ্দকারীদের জন্য ফ্লোর এরিয়ার অনুপাতও ১.৫ থেকে বাড়িয়ে ২ করা হয়েছিল। ওই বছরের ডিসেম্বরে, এমারেল্ড কোর্ট আবাসন প্রকল্পের জন্য প্রথম সংশোধিত পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়েছিল নয়ডা কর্তৃপক্ষ। যার ফলে আগের ১৪টি টাওয়ারে অতিরিক্ত দুটি করে তল যোগ করা হয়েছিল, প্রতিটি বহুতল ১২ তলায় পরিণত হয়েছিল।

এছাড়া অতিরিক্ত দুটি ভবন এবং একটি শপিং কমপ্লেক্স তৈরির প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছিল। ২০১২ সালে, ফের বদলানো হয় পরিকল্পনা। নতুন দুটি টাওয়ারের উচ্চতা ৪০ তলা হবে বলে ঠিক করা হয়। নয়ডা কর্তৃপক্ষ নতুন পরিকল্পনাটিকেও অনুমোদন দিয়েছিল। ধুলোয় ও অন্য কোনও ভাবে যাতে স্থানীয়রা অসুবিধায় না পড়েন সে কথা ভেবেই রবিবার সকাল থেকে জোড়া টাওয়ার সংলগ্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। একই কারণে বিস্ফোরণের আগেভাগে বন্ধ থাকবে নয়ডা-গ্রেটার নয়ডা এক্সপ্রেসওয়ে।

এছাড়া যমজ অট্টালিকার ৪৫০ মিটারের মধ্যে সব রাস্তা বন্ধ রাখা হচ্ছে। পাইপলাইনে এলাকায় গ্যাস সরবরাহের কাজ বন্ধ থাকছে। দুপুর একটা নাগাদ নিরাপত্তারক্ষীদেরও সরিয়ে ফেলা হবে টুইন টাওয়ার এলাকা থেকে। বিপদ এড়াতে তৈরি থাকছে দমকল থেকে অ্যাম্বুলেন্স। নিকটবর্তী হাসপাতালে ৫০টি বেড বুক করেছে প্রশাসন। তৈরি থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দু’টি দল।

তবু স্থানীয় বাড়িগুলি ধুলোয় ভরে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা। ঘরের ভিতরে যাতে ধুলো না ঢোকে তা নিশ্চিত করতে বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ রাখতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে প্রশাসন তৈরি। ধুলো দূর করতে জলের ট্যাঙ্কার, ‘স্মগ গান’ ব্যবহার করা হবে। রাস্তায় ধুলোর আস্তরণ সাফ করতে বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের আরও তরফে জানানো হয়েছে, বহুতল ভাঙার পর যে ধ্বংসস্তূপ থাকবে, তা পরিষ্কার করতে তিন মাস সময় লাগবে।

নির্মাণের জন্য দুটি বহুতলের মধ্যে ন্যূনতম যে দূরত্ব রাখা প্রয়োজন, তা লঙ্ঘন করেছে। আর এই বিষয়ে ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতিও নেওয়া হয়নি। সিয়ান এবং অ্যাপেক্স- টুইন টাওয়ারগুলি ভেঙে ফেলার দাবি জানান তাঁরা। নয়ডা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছিল তাদের দেওয়া অনুমোদন বাতিল করার জন্য। তাতে কাজ না হওয়ায় বাসিন্দারা, টাওয়ারগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ চেয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট সেই দাবি মেনে নেয়। ২০১৪ সালে, হাইকোর্ট টুইন টাওয়ারগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল।

সুপারটেক এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। সেই মামলা শেষ হয় ২০২১ সালে। সুপ্রিম কোর্টও, টুইন টাওয়ারগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। আদালত জানায়, টাওয়ারগুলি অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল। উত্তর প্রদেশ অ্যাপার্টমেন্ট আইন অনুযায়ী ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতি নেওয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট আরও বলে, নয়ডা কর্তৃপক্ষ এবং সুপারটেক “জঘন্য জটিলতায়” জড়িত ছিল এবং সংস্থাকে নয়ডা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় নিজেদের খরচে ভবন গুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়।

প্রথমে ভবনগুলি চলতি বছরের মে মাসে ভেঙে ফেলার কথা ছিল। পরে ২১ অগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। সম্প্রতি, প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং আবহাওয়ার কারণে সুপ্রিম কোর্ট ২৮ অগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভবন দুটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *