Bangla24x7 Desk : ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ১৫৭ বছরের পুরনো সাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। সাইরাসের মৃত্যুর পর এই সম্পত্তির কী হবে? কে এই গোষ্ঠীর দায়িত্ব সামলাবেন? উঠছে এমনই একাধিক প্রশ্ন।

সাইরাসের আগে লক্ষ কোটি টাকার এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন তাঁর দাদা সাপুর। তাঁরও আগে দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের বাবা পালোনজি মিস্ত্রি। কিন্তু চলতি বছরের জুন মাসে পালোনজির মৃত্যু হয়। তার পরই এই গোষ্ঠীর মাথায় বসেন সাইরাস। সাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠীর অংশীদারিত্ব রয়েছে টাটা গোষ্ঠীতেও। টাটা গোষ্ঠীর মোট সম্পত্তির প্রায় ১৮.৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর হাতে। ১৮৬৫ সালে সাইরাসের প্রপিতামহ (তাঁর নামও পালোনজি মিস্ত্রি) এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় এই সংস্থার নাম ছিল ‘লিটলউড পালোনজি অ্যান্ড কোম্পানি’।

এই গোষ্ঠীকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার পিছনে যে মানুষটির সব থেকে বেশি অবদান, তিনি সাইরাসের বাবা পালোনজি। মুম্বইয়ে তিনি ‘দ্য ফ্যান্টম অব বম্বে হাউস’ নামেও পরিচিত ছিলেন। রিয়েল এস্টেট, ভোগ্যপণ্য থেকে সৌরশক্তি— বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে সাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠী। ৫০টিরও বেশি দেশে এই গোষ্ঠীর ব্যবসা রয়েছে। কর্মীর সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি।

২০১২ সালের ডিসেম্বর টাটা সন্সের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার কারণে সাইরাস প্রথমে সাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠী সামলানোর দায়িত্ব নেননি। ওই একই বছরে পালোনজি অবসর নেওয়ার পর তাঁর বড় ছেলে এবং সাইরাসের দাদা সাপুর মিস্ত্রিই ব্যবসার দেখাশোনা শুরু করেন। ২০১৯ সালের শেষের দিকে সাপুরের ২৬ বছর বয়সি ছেলে পালোনকে এই গোষ্ঠীর বোর্ডে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। সাপুরের মেয়ে তানিয়াকেও কর্পোরেটগুলির সামাজিক দায়বদ্ধতার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অংশীদারদের সঙ্গে সঠিক ভাবে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রেও মিস্ত্রি পরিবারের নতুন প্রজন্মকে কাজে লাগানো হয়। তবে বর্তমানে পালোন এই গোষ্ঠীর অন্যতম শীর্ষ পদে আছেন। দীর্ঘমেয়াদি, কৌশলগত এবং প্রভাবশালী সিদ্ধান্ত নেওয়াও তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সাইরাসের মৃত্যুর পর মনে করা হচ্ছে আবার এই গোষ্ঠীর মাথায় বসতে পারেন সাপুর। পালোন এবং তানিয়ার দায়িত্ব আরও বাড়তে পারে বলেও সূত্রের খবর।

সাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠী প্রকৌশলী দক্ষতার জন্য বিশেষ ভাবে পরিচিত। অ্যাফকন নামে এক নির্মাণ সংস্থাও রয়েছে এই গোষ্ঠীর অধীনে। দেশের বড় বড় বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে এই সংস্থা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। একাধিক হোটেল, বিলাসবহুল বাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কারখানাও তৈরি করেছে এই সংস্থা। জল শোধনকারী এবং ভ্যাকুয়াম ক্লিনার প্রস্তুতকারক এক নামী সংস্থা রয়েছে এই গোষ্ঠীর অধীনে। সৌর প্যানেল তৈরি করা সংস্থাগুলিতে শেয়ার রয়েছে এই গোষ্ঠীর।

২০০৬ সালে টাটা সন্সের বোর্ড থেকে পালোনজি মিস্ত্রির অবসরের পর সাইরাস টাটা বোর্ডে যোগ দেন। ২০১২ সালে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদ থেকে রতন টাটা সরে যাওয়ার পর সেই পদে আসেন সাইরাস। ২০১৬ সালে সাইরাসকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর এর পরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মন কষাকষি প্রকাশ্যে আসে। ২০০৩ সালের প্রথম দিকে, মিস্ত্রি পরিবার ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে দেয় এবং আইরিশ নাগরিক হয়ে ওঠে। ঘোড়াদের প্রতি বিশেষ প্রীতি আছে মিস্ত্রি পরিবারের। পুণেতে ২০০ একর জমির উপর তৈরি একটি ঘোড়াশালও আছে এই পরিবারের।

সাইরাস টাটা গ্রুপের দায়িত্বে থাকাকালীন এই গ্রুপের উন্নতির হার ১২.৫ শতাংশ বাড়ে। টাটা গোষ্ঠীর রমরমা বৃদ্ধি পায়। তবে একই সঙ্গে বাড়ে ঋণের পরিমাণও। সাইরাসের সময়ে বাজারে এই টাটা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ১.৮৯ লক্ষ কোটি থেকে বেড়ে ২.২৯ লক্ষ কোটি হয়। সাইরাস টাটা গ্রুপের দায়িত্বে থাকাকালীন এই গ্রুপের উন্নতির হার ১২.৫ শতাংশ বাড়ে। টাটা গোষ্ঠীর রমরমা বৃদ্ধি পায়। তবে একই সঙ্গে বাড়ে ঋণের পরিমাণও। সাইরাসের সময়ে বাজারে এই টাটা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ১.৮৯ লক্ষ কোটি থেকে বেড়ে ২.২৯ লক্ষ কোটি হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *