Homeঅফবিটরোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ , জেনে নিন রমজানের অজানা কথা

রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ , জেনে নিন রমজানের অজানা কথা

spot_img

Bangla24x7 Desk : আরবি মাস সমূহের নবম মাস হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। রোজা শব্দটি ফারসি। রমজানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ্ তাআলা এ মাসটিকে স্বীয় ওহি সহিফা ও আসমানি কিতাব নাজিল করার জন্য মনোনীত করেছেন। অধিকাংশ কিতাব এ মাসেই নাজিল হয়েছে।

রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো, পরহেজগার হতে পারো। এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি, রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে তাকওয়া অর্জনের জন্য, গুনাহ বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতের উপযোগী হওয়া, নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য।

রোজা পর্ব : রমজান শরীফের রোজার বিবরণ- ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমযান হচ্ছে তৃতীয় স্তম্ভ। দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে রোযা ফরযের আয়াত নাযিল হয় এবং তার পরের মাস রমযান থেকেই এই আইন বলবৎ হয়। আল্লাহ প্রবিত্র কুরআনে বলেন,’হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে। যেরুপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। এই উক্তিটি আল কুরআনে সূরাহ বাকারাহ -১৮৩ নম্বর আয়াত এ বর্ণিত আছে। সুবেহ সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার খাওয়া, পান করা, স্ত্রী মিলন, অশ্লীল বাক্যালাপ, কুর্কম ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার নাম রোযা।আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যেই খালেস অন্তরে নিয়েত করে সেহরী খেয়ে রোযা রাখতে হবে।

তবে মুসাফির ও রূগী ব্যাক্তিরা রোযা রাখতে না পারলে অন্য মাসে পূর্ণ করে নেবে। বয়স্ক দের জন্য এবং রোগাক্রান্ত ব্যাক্তির জন্য যার রোগ ভাল হওয়ার সম্ভাবনা আদৌ নেই, রোযা রাখতে অক্ষম, তারা ফিদাইয়া দেবে অর্থাৎ একটি রোযার বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে। রমযান মাসের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত যথা ২১,২৩,২৫,২৭ এবং ২৯শে রাত্রের যে কোন একটি পূর্ণ রাত জেগে এবাদত করার চেয়েও উত্তম। খোদা আসল রমযান কারীদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাদের সমস্ত পাপকে মার্জনা করে দেন। আমাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য নবীজী বাতীস্থ সকল সভ্য-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার এক সাঅ করে ফিতরা ধার্য করেছেন।ইহা একান্ত পালনীয় কার্য।খোদা আমাদের সকলকে সুন্দরভাবে রমযান পালন করার তৌফিক দিন ।

১) সকল প্রকার অন্যায় থেকে বিরত থাকা : রমজানে অযথা কথা-কাজ ও সকল প্রকার অন্যায় থাকতে বিরত না থাকলে সিয়াম কবুলের বিষয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি: ১৯০৩)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার। (বুখারি: ১৯০৪)

সেহেরি খাওয়া : রোজা রাখার জন্য সেহেরি খাওয়া সুন্নত। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা সেহরি খাও। কেননা, সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১/৩৫০)

এছাড়াও রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিস অনুযায়ী ‘আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবের রোজার মধ্যে পার্থক্য হল সেহরি খাওয়া।’ (মুসলিম: ১০৯৬; আবু দাউদ: ২৩৪৩)

এক ঢোক পানি পান করলেও সেহরির সুন্নত আদায় হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সেহরি করো। কারণ যারা সেহরি খায়, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/১২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৯০১০; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৪৭৬)

রোজা রাখিবার নিয়েত – উচ্চারণ-নাওইয়াতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রামাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আন্তাস সামীউল আলীম।

অর্থ-আমি রমজান শরীফের ফজর রোজা রাখিবার মনস্থ করিলাম। হে আল্লাহ! উহা গ্রহণ করো। অবশ্যই তুমি শ্রোতা ও জ্ঞাতা।
রোযা রাখিবার নিয়ম- নিয়েত ব্যতীত রোজা দূরস্থ হয় না। অতএব রোজার নিয়েত করা নিত্যন্ত প্রয়োজন। এই ভাবে ৩০ দিনে ৩০ তি নিয়েত করিতে হয়।

যে যে কারণে রোযা নষ্ট হয় –
১। স্ব-ইচ্ছায় ইন্দ্রিয় সেবা করিলে।
২। ইচ্ছাপূর্বক পানাহার করিলে ।
৩। স্বেচ্ছায় তামাক, ঔষধ বা ঐ শ্রেণীর কোন কিছু খাইলে।
৪। নাসিকা বা কর্ণ-কুহরে কোন ঔষধ প্রবেশ করিয়া দিলে।
৫।মাথায় বা পেটের উপর ঐরুপ কোন ঔষধ দিলে (যাহা পেটের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়)।
৬।কুল্লি করিবার সময় ইচ্ছাপূর্বক না হইলেও পানী গলধঃকরণ হইলে।
৭। স্বেচ্ছায় মুখ ভরিয়া বমি করিলে।
৮। কোন বস্তু কন্ঠনালীর ভিতর প্রবিষ্ট হইলে।
৯। সোবেহ সাদেকের পরে সেহরী খাইলে।
১০। সূর্যাস্তের পূর্বেই ইফতার করিলে।
১১। ভ্রম বশতঃ আহার করিয়া রোজা নষ্ট হইয়াছে ভাবিয়া পুনরায় আহার করিলে।

যে যে কারণে রোজা নষ্ট হয় না
১। ভ্রম বশতঃ পানাহার বা ইন্দ্রিয় সেবা করিলে।
২। শরীরে তোইল মর্দ্দন করিলে ।
৩। চোখে সুরমা লাগাইলে।
৪।ধুম,ধুলি বা মক্ষিকা গলার ভিতিরে প্রবেশ করিলে।
৫। দাঁতন করিলে ।
৬।হঠাৎ কানে পানি গেলে।
৭।গলার ভিতরে বমি আসিয়া উহা পুনরায় নামিয়া গেলে।

জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ : রমজান কোরআন নাজিলের মাস। এই মাসে আল্লাহ তাআলার প্রত্যেকটি আদেশ-নিষেধের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য রমজানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে মুমিনগণ ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারা: ২০৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। পবিত্র রমজানের আদবগুলো যথাযথভাবে মেনে চলার তাওফিক দান করুন। পবিত্র মাসকে সুন্দরভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

1 COMMENT

  1. এটি রমজানের একটা সুন্দরতম বিবরণ ৷
    আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে রোজা রাখার তৌফিক দান করুক৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments